শিরোনাম

(১ম খন্ড অনুগল্প) একজন রিক্সাচালকের দুঃস্বপ্ন- ২য় অংশ: মোস্তফা হারুন, সহ. পুলিশ সুপার

 

উপস্থাপক: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয় আপনি ক্ষমতা গ্রহণ করেছেন। আমরা খুব আনন্দিত। দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে আপনার প্রথম পদক্ষেপ কি হবে?

প্রধানমন্ত্রী: উপস্থিত সকলকে যারা টিভির সামনে বসে আমার বক্তব্য শোনার জন্য অপেক্ষা করছেন এবং যারা আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচন করে আপনাদের সেবার সুযোগ করে দিয়েছেন আমি সবাইকেই আমার প্রানঢালা অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।আমি আমার উপর দেয়া আপনাদের আমানত যথাযথ ভাবে রক্ষা করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। আমি প্রথমেই বলতে চাই,আমি যাদেরকে নিয়ে আপনাদের সেবা করবো আমাকে আগে তাদেরকেই ঠিক করতে হবে।

তার মধ্যে অন্যতম হলো আমার মন্ত্রী পরিষদের সদস্যদের ও সরকারি চাকুরীজীবিদের। তার আগে আমি মহান স্বাধীনতার দিনকে স্বরন করে বলতে চাই। এই দেশকে পরাধীনতার ছোবল থেকে রক্ষা করে আপনারা স্বাধীনতা উপহার দিয়েছেন।যারা এই দেশ স্বাধীন করতে গিয়ে জীবন দিয়েছেন এবং যে সব মা বোনেরা এই দেশের জন্য নিজেরা লাঞ্চিত হয়েছেন,বিরংগনা হয়েছেন আমি তাদের গভীর ভাবে স্বরন করছি। এই দেশ পরাধীনতার ছোবল থেকে মুক্ত করতে যার নেতৃত্ব ও অনুপ্রেরণা জাতীকে সবচেয়ে সাহস জুগিয়েছিল সেই মহান নেতা বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবকে গভীর ভাবে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।

আরও শ্রদ্ধা জানাচ্ছি এদেশের সকল সেক্টর কমান্ডারদের যাদের নেতৃত্বে দেশের সেনাবাহিনী, পুলিশ বাহিনী, আপামর জনতাকে, যেসব যুবক ভাইদের যারা দেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছেন এবং অকাতরে প্রান বিসর্জন দিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছেন। এই দেশকে স্বাধীন করার জন্য দেশের সকল শ্রেনীর পেশাজীবি মানুষ অংশ গ্রহন করেছিল। যা পৃথিবীতে অমর হয়ে রইবে।
আজ প্রায় ৪০ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। দেশ স্বাধীন হলেও দেশের কোন উন্নতি ঘটে নাই।

জাতীর ভিতর একতাবদ্ধতা নেই। যার কারণে উন্নয়ন যেন থমকে গেছে। এখন কথা বলার সময় নয়। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবার সময় এসেছে। যেমনটি করে দেশ স্বাধীনতার পিছনে দেশের সকল পেশজীবি মানুষ একতাবদ্ধ হয়েছিল ঠিক তেমনই করে দেশকে এগিয়ে নিতে গেলে আবার দেশের সকল পেশাজীবি, অপজিশন নেতাকর্মীদের একত্রিত হতে হবে। তাদের একত্রিত করা এবং তাদেরকে উন্নয়নের সাথে একতাবদ্ধ করাই হচ্ছে আমার প্রধান দায়িত্ব।

উপস্থাপকঃ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয় আপনি আপনার বক্তব্যে বললেন আগে আপনার মন্ত্রী পরিষদ ও সরকারি চাকুরীজীবিদের ঠিক করবেন,তা কিভাবে করতে চান?

প্রধানমন্ত্রীঃ দেখুন এটা একটি জটিল বিষয়। তবুও তা করতে হবে। আমি ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে বলছি। ধরুন আমার সরকার সরকারি চাকুরীজীবিদের পরিবারের চিকিৎসার জন্য মাসে দেয় মাত্র ১৫০০ টাকা, সন্তানদের শিক্ষা ব্যয় দেয় মাত্র ১০০০ টাকা, বাড়ী ভাড়া যেটা দেয়া হয় সেটা যথাযুক্ত নয়। যার কারণে তারা অন্যায় পথে উপার্জনের রাস্তা বেছে নেয়। ডাক্তারে ফি দিতেই চলে যায় ১৫০০ টাকা তাহলে রোগের পরীক্ষানিরীক্ষা ও ঔষধ কেনার টাকা তারা পাবে কোথায়? সন্তানের স্কুলের বেতন, কলেজের বেতন,যাতায়াত ইত্যাদি এসব কি মাত্র ১০০০ টাকাতে সম্ভব? ঢাকা শহরে বাড়ী ভাড়া লাগে কমপক্ষে ১৫ হাজার টাকা, এর সাথে আছে গ্যাস বিল,বিদুৎ বিল,পানির বিল ইত্যাদি।

আর তাদেরকে দেয়া হয় ৮ হাজার থেকে ১৩ হাজার টাকা। বাকিটা যোগান দিবে কোথা থেকে?নিশ্চয়ই জোগান দিবে ঘুস খেয়ে,অবৈধ উপার্জন করে? তারা সংসারের চিন্তা করবে না দেশের চিন্তা করবে? তাই আগে তাদেরকে চিন্তামুক্ত জীবন ধারনের পথ করে দিতে হবে। আর মন্ত্রীদের কথা বলছেন?মন্ত্রীত্ব পাওয়ার আগে তাদের সম্পদের হিসাব জনসমুক্ষে প্রকাশ করা হবে এবং প্রতিবছর তাদের হিসাব নিয়ে আবার তা জনসমুক্ষে প্রকাশ করা হবে।

যেন তারা দেশ সেবার আড়ালে জনগনের অর্থ লোপাট করার সুযোগ না পায়। তাদের একটি মাত্র ব্যাংকে একটি একাউন্ট থাকবে। একাধিক একাউন্ট ক্লোজ করে দেয়া হবে। কড়া নজরদারীতে রাখা হবে। প্রতিমাসে মন্ত্রণালয়ের কাজের তদারকির ব্যাবস্থা করা হবে। তাদের কাজের সময় সীমা বেধে দেয়া হবে। তাদের পোশালে মন্ত্রী থাকবে না পোশালে পদত্যাগ করে চলে যাবে। তাও আমি অসৎ নেতাদের মন্ত্রীত্ব দিতে চাইনা।

উপস্থাপকঃ তাহলে সরকারি চাকুরীজীবিদের চিকিৎসা, শিক্ষা,আবাসন নিয়ে কেমন করে ভাবছেন স্যার?

প্রধাম্নমন্ত্রীঃ তাদের সন্তানদের মেধাক্রম অনুযায়ী সরকারি স্কুল,কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে,মেডিকেল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ করে দিব সেখানে তারা বিনাবেতনে লিখাপড়া করবে। বিনামুল্যে তাদের পরিবারের চিকিৎসার ব্যাবস্থা ও ঔষধের ব্যাবস্থা হবে সরকারি হাসপাতালে এবং প্রত্যেকের জন্য ঢাকা মহানগর সহ বিভিন্ন মহানগরে,জেলা উপজেলায় সরকারি কোয়ার্টার এর ব্যাবস্থা করে দিব। প্রয়োজনে তারা বিনা সুদে ২০ বছর মেয়াদি লোন নিয়ে বাড়ী করার সুযোগ দিব। এরপরেও যদি ঘুস খায় এবং অবৈধ অর্থ উপার্জনের দিকে ঝুকে পড়ে তাহলে তাদের বাছাই করে চাকুরীচুত্য করে জেলে ভরে দিব। তখন কোন উদারতা দেখানো হবেনা।

উপস্থাপকঃ স্যার যদি বাজার দর নিয়ন্ত্রণে না থাকে তাহলে তারা বেতন দিয়ে চলবে কেমন করে?

প্রধানমন্ত্রীঃ বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য যুগোপযোগী ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে সৎ অফিসার দ্বারা বাজার তদারকি করা হবে।ব্যাবসা কোন সিন্ডিকেটের হাতে না পড়ে সেজন্য কঠোর ভুমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। ক্রাইসিস মালামালের চাহিদা পুরনের জন্য আগে থেকেই সেই পণ্য আমদানি করা হবে। ইতিমধ্যে একটি আইন হয়েছে। ব্যাংকে যত টাকাই রাখুক ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গেলে আমানতকারী ক্ষতিপূরণ পাবে মাত্র ১ লক্ষ টাকা। এই আইনের উদ্দ্যেশ হলো, আমানতকারীদের ব্যাংকে টাকা রেখে শুধু লাভ খাওয়ার অভ্যাস কমানো। এই আইনের ফলে আমানতকারীদের ভিতর বিনিয়োগের ঝোক বাড়বে।

তারা ব্যাবসা বাণিজ্য, চাষাবাদে,ঝুকে পড়বে।এতে অর্থনীতি চাংগা হয়ে উঠবে। আমি বিশেষ করে সরকারিভাবে সরকারি জলাভূমি ও খাস জমিতে মাছ চাষ, গরু ছাগল ভেড়া হাস মুরগী ইত্যাদির খামার গড়ে তুলবো যাতে করে এসব পণ্যের জন্য আমদানি নির্ভর হতে না হয়। কৃষকদের অনুদান দেয়া হবে ধান,গম ,ভুট্টা ও কাচা তরি তরকারি চাষের জন্য। যাতে করে দেশ খাদ্যে সয়ং সম্পুর্ন হয়ে উঠে এবং নিজেদের চাহিদা মেটানোর পরে বিদেশে রফতানি করার সুযোগ তৈরি হয়। তাহলে এমনিতেই বাজারের মুল্য নিয়ন্ত্রণ হয়ে যাবে এবং পণ্য সকলের ক্রয় ক্ষমতার ভিতর থাকবে ইনশাআল্লাহ।

উপস্থাপকঃ ঢাকা শহরের জ্যাম নিয়ে কি ভাবছেন বলবেন কি?

প্রধানমন্ত্রীঃ একটি সুন্দর প্রশ্ন করেছেন। জ্যাম এখন জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এ থেকে উত্তরনের জন্য আমি একটি বিশেষ পরিকল্পনার কথা আগে থেকেই ভেবে রেখেছি। ঢাকা মহানগর দেশের রাজধানী। রাজধানীর সৌন্দর্য বাড়াতে ফ্ল্যাই ওভার, মেট্রোরেল, আন্ডারপাস, ইত্যাদি দরকার আছে বটে তবে এসব দিয়ে জ্যাম সারানো যাবেনা।
(চলবে)

লেখক- মো: মোস্তফা হারুন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার, ২ এপিবিএন, মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ।

নিউজটি শেয়ার করুন :