লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি :
নিষেধাজ্ঞার কারনে মার্চ, এপ্রিলে এ দু’মাস জেলেরা নদীতে ইলিশ ধরতে পারেননি মেঘনায । উপার্জনও বন্ধ ছিল। সংসার চালিয়েছেন ধার দেনা করে। যখন নিষেধাজ্ঞা শেষ হলো, তখনি বুকভরা আশা নিয়ে নৌকা ভাসালেন, নদীতে ফেললেন জাল। কিন্তু ভরা মেঘনায় যে ইলিশ শূন্য! তবে ছোট মাছে ভরপুর। এটা পেয়েও মোটামুটি খুশি তারা।
ইলিশ না পেয়ে হতাশার কথা শোনালেন লক্ষ্মীপুরের রায়পুর চরবংশী সুইজগেইট এলাকার মাছঘাট এলাকার জেলে হাবিল মিয়া। তিনি চিন্তায় মগ্ন কিভাবে তার সংসার চলবে। দেনার টাকাই-বা কীভাবে শোধ করবেন?
তিনি আরো বলেন, অন্যসময় নিষেধাজ্ঞার পর নদীতে ছোট-বড় ইলিশ ধরা পড়তো। এবার জেলেরা কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পাচ্ছেন না। অথচ মেঘনায় পানি ভরপুর। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় লোকালয়েও প্রবেশ করছে। ডুবে যাচ্ছে ঘরবাড়িসহ ফসলের জমি। তবে ইলিশ না পেলেও ১৬ প্রকার ছোট মাছে ধরা পড়ছে।
জানা গেছে, চাঁদপুরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের রামগতির আলেকজান্ডার পর্যন্ত নদী তীরবর্তী অঞ্চলে প্রায় ৬২ হাজার জেলের বাস। তবে সরকারি তথ্য মতে সংখ্যাটি ৫২ হাজার। নিষেধাজ্ঞার সময় জেলার ২০ হাজারের অধিক জেলেকে সরকারিভাবে সহায়তা করা হয়। এখন অভিযান না থাকায়, জেলেরা প্রতিদিনই যাচ্ছেন নদীতে। কিন্তু নদীর বিভিন্ন স্থানে ডুবোচর থাকায় প্রত্যাশিত ইলিশ পাচ্ছেন না তারা।
মজু চোধুরী ঘাট এলাকার জেলে মো. আকবর বলেন, পহেলা মে থেকে করোনা ঝুঁকি নিয়ে মাছ শিকারে নদীতে গিয়েছিলাম। কিন্তু লাভ হয়নি। এতে আমার মতো দিশেহারা অন্যরাও ! ঋনের টাকা তাদের জন্য বিষফোঁড়া। রয়েছে আড়ৎদার ও দাদনদারদের কঠিন চাপ। অন্যান্য বছর এ সময় জেলেরা নদী থেকে ঝুড়ি ভর্তি মাছ নিয়ে ঘাটে ফিরতেন। আড়তে মাছ রাখামাত্র শুরু হতো হাঁক-ডাক। বেচাকেনায় সরগরম থাকত নদী তীরবর্তী ঘাটগুলো।
মতিরহাট মাছঘাটের আড়ৎদার মনির হোসেন বলেন, প্রত্যাশিত পরিমাণে ইলিশ ধরা পড়ছে না। যে কারণে দামও কমেনি। বড় ইলিশ প্রতি কেজি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, মাঝারি ইলিশ ৬০০ থেকে ৮০০ এবং ছোট ইলিশ প্রতি কেজি ২৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, ডুবোচরের কারণে নয়, নদীতে পানি বেশি হওয়ায় জেলেরা প্রত্যাশিত ইলিশ পাচ্ছেন না। তবে প্রচুর ছোট ছোট মাছ ধরা পড়ছে। আষাঢ় মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।