শিরোনাম

এমপিও ভুক্ত শিক্ষকদের বদলি সময়ের দাবি

 

এম এ তাহের, চট্টগ্রাম জেলা সংবাদদাতাঃ

বর্তমানে এমপিও ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্টানে বছরে একবার কেন্দ্রীয়ভাবে শিক্ষক -শিক্ষিকা নিয়োগ দেওয়া হলেও আইনের মারপ্যাঁচে লক্ষ লক্ষ শিক্ষক একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে বাধ্য। কয়েকটি প্রশাসনিক পদ ছাড়া সব পদে সরকারিভাবে বছরে একবার শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ায় অধিকাংশ শিক্ষক যেহেতু অপর প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছে না এই সুযোগে অনেক এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের মধ্যে নানা প্রকার গ্রুপিং কোন্দল বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক।

সেহেতু একই প্রতিষ্ঠানে একজন শিক্ষক চাকরি করতে বাধ্য। সেই সুযোগে একজন নিরীহ শিক্ষকের উপর প্রতিষ্ঠান প্রধান ও পরিচালনা কমিটি কর্তৃক জুলুম, অবিচার, বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করতে দেখা যায়। যা ভুক্তভোগীরা প্রকাশ করতে পারে না। এক সময় প্রতিষ্ঠানের নামে একক চেকে ব্যাংক হতে টাকা উত্তোলন করে প্রতিষ্ঠান প্রধান কর্তৃক অন্য শিক্ষকদের মাঝে বেতনের টাকা বন্টন করে দিতেন। সেই সময়ে অনেক শিক্ষক সারা মাস চাকরি করলেও মাস শেষে প্রাপ্য বেতন পাবে কিনা এই সন্দেহে থাকতেন।

সেই ভয়ংকর পরিস্থিতি হতে মুক্তি দিয়েছেন বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার। নিজ নিজ শিক্ষকদের ব্যাংক একাউন্ট খুলে দেওয়ার মাধ্যমে। ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া শিক্ষকরা এই অবদানের কথা কখনো ভুলতে পারবে না।  বর্তমানে মাস শেষে শিক্ষকদের বেতনের শতভাগ টাকা দেয় সরকার। কিন্তু পরিচালনা কমিটির হাতে এত বেশি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে যে , বর্তমান পরিস্থিতিতে তাহা প্রদান করা সমিচিন কি..না ভাবার বিষয়।যেহেতু শিক্ষকদের বেতন ,ছাত্র-ছাত্রীদের বই, উপবৃত্তি, মেধাবৃত্তি, প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠানের জন্য ভবন সরকারিভাবে দেওয়া হচ্ছে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একজন শিক্ষার্থী যতটুকু নিরাপত্তা ভোগ করেন তাহার কিয়দংশ একজন নিরীহ দূর-দূরান্ত হতে আগত শিক্ষক-শিক্ষিকা ভোগ করেন কিনা তাও দেখার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন অনেকে। এমপিওভুক্ত শিক্ষক শিক্ষিকাদের বদলির ব্যাপারে অনেকে নানা যুক্তিতে অসম্ভব মনে করলেও নিম্নোক্ত বিষয়গুলো ভেবে দেখা যেতে পারে। (ক)বদলিটা নিজ উপজেলা /জেলার পরিবর্তে  বর্তমানে শিক্ষক – শিক্ষিকারা যে উপজেলা/ জেলায় কর্মরত আছেন সেখানে সীমাবদ্ধ করা।

(খ) প্রত্যেক এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানকে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা, পাশের হার, অর্থনৈতিক সক্ষমতার ভিত্তিতে ক,ক্যাটাগরি , খ,ক্যাটাগরি ও গ,ক্যাটাগরিতে চিহ্নিত করে শিক্ষকরা যে যে ক্যাটাগরির প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষিকা হবেন তাদেরকে অনুরূপ  ক্যাটাগরীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলক নির্দিষ্ট মেয়াদান্তে বদলি করা। এইভাবে বদলি করলে ঘর ভাড়ার ব্যাপারটা তেমন জটিল হবেনা। অর্থাৎ শিক্ষকরা বাধ্যতামূলক ভাবে ঘর ভাড়া দাবি করতে পারবেন না বলে মনে করছেন বিজ্ঞজনেরা।

(গ) প্রয়োজনের বেশি কোন জেলা/উপজেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকলে তাহা অপ্রয়োজনীয় বিবেচিত হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান,শাখা, শ্রেণি বন্ধ করে ঐসকল শিক্ষক – শিক্ষিকাকে পার্শ্ববর্তী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অন্তর্ভুক্ত করা। একস্থানে একজন শিক্ষক – শিক্ষিকা দীর্ঘদিন চাকরি করলে মহান শিক্ষকতা পেশার পরিবর্তে এলাকার নানা অসামাজিক, অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িত হওয়াটা অসম্ভব নয়।

আমরা যদি একটু পিছনে দিকে তাকায় ফেনীর সোনাগাজী ফাজিল ডিগ্রী মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজদ্দৌলার ঘটনা মনে পড়ে যায়। ওনার মত প্রতিষ্ঠান প্রধানরা নিজের সুবিধার জন্য অদক্ষ, মূর্খ, জ্ঞানহীন ব্যক্তিদের সভাপতি বানিয়ে বিবিধ ও অর্থনৈতিক সুবিধা ভোগ সহ অপকর্ম করে চলেছে। যাহা অন্যান্য শিক্ষকরা দেখেও না দেখার ভান করে থাকেন প্রতিষ্ঠান প্রধান ও কমিটির ভয়ে।

তাই শিক্ষকদের স্বার্থে,শিক্ষার সুন্দর পরিবেশের স্বার্থে, একজন শিক্ষক- শিক্ষিকাদের নিরাপদ চাকরির স্বার্থে বদলি প্রথা চালু করা সময়ের দাবি।।

নিউজটি শেয়ার করুন :