শিরোনাম

চরকাদিরা ইউপি চেয়ারম্যান খালেদ সাইফুল্লাহ ইবাদত মনে করে জনগণের উপকারে ছুটে যান

আমানত উল্লাহ,রামগতি-কমলনগরঃ

দেশের একজন শীর্ষ আলেম আল্লামা খালেদ সাইফুল্লাহ।লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তিনি হাফেজ্জী হুজুরের জামাতা ও খলিফা। আল্লাহপ্রেমী, সৎ ও জনদরদি একজন চেয়ারম্যান। চালচলনে পোশাক-আশাকে তিনি একজন সাদামাটা মানুষ হলেও চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনে খুবই সচেতন।

৬৮ বছর বয়সী প্রবীণ এ আলেম মানুষের কাছে পীর সাহেব কমলনগর হিসেবে পরিচিত। চরমোনাইর পীর সাহেবের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনয়নে হাতপাখা প্রতিক নিয়ে বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সম্প্রতি করোনার প্রাদুর্ভাবে সারা দেশে যখন লকডাউন পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তখন তিনি ঘরে আটকা পড়া গরিব-অসহায় মানুষের দ্বারে দ্বারে নিজ দায়িত্বে খাদ্য সহযোগিতা নিয়ে মানুষের বাড়ী পৌছে দিয়েছেন। এমন ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় আসার পরিপ্রেক্ষিতে দৈনিক ওলামাকন্ঠ তার সঙ্গে কথা বলেছেন।

আল্লামা খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন ‘আমি আক্ষেপ করছি, কেন আমি আরো আগে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পাইনি। সম্প্রতি এক ভদ্রলোক আমাকে বলেছেন, হুজুর, আপনি কেন এ দায়িত্বটা নিয়েছেন, এটা নেওয়া আপনার জন্য ঠিক হয়নি, এটি আপনি ছেড়ে দেন। আমি তাঁকে বলেছি, আপনি তো চাচ্ছেন আমাকে এটা ছেড়ে দেওয়ার জন্য, কিন্তু আমি আক্ষেপ করছি, আরো ২০-৩০ বছর আগে কেন এই দায়িত্বটা নিলাম না।

আমি এখন প্রতিনিধিত্ব করার জন্য উলামায়ে কেরামদের উৎসাহিত করছি। আর সবাইকে বলছি, তোমরা আল্লাহপাকের কাছে কী জবাব দেবে? শুধুই কি রসিদ দিয়ে টাকা কালেকশন করে মাদরাসা করবা? আল্লাহপাকের কাছে কি জবাবদিহি করা লাগবে না? মানুষের সেবা করাও একটা ইবাদত। জনসেবা- জনগণের খেদমত করাটা অন্যান্য ইবাদতের চেয়ে উত্তম ইবাদত। মানুষ ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে চায়। আর আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি হলো জনসেবা করা।

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ এক সাক্ষাতকারে দৈনিক ওলামাকন্ঠকে এসব কথা বলেন। তিনি দেশব্যাপী লকডাউন পরিস্থিতি চলাকালীন এলাকার জনগণের উদ্দেশে ঘোষণা দিয়েছেন,অভাবের কারণে আমার ইউনিয়নে যদি কাউকে না খেয়ে থাকতে হয়,তবে আমি সাইফুল্লাহ সর্বপ্রথম না খেয়ে থাকব। কারো ঘরে ভাতের চাল না থাকলে বা কারো পকেটে সদাই করার টাকা না থাকলে সরাসরি আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। আমার পকেটে টাকা থাকতে আমার ঘরে এক মুঠো চাল থাকতে চরকাদিরায় কেউ না খেয়ে থাকবে না ইনশাআল্লাহ।তবে কাউকে পাঠিয়ে নয়,নিজ হাতে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে দিয়ে এসেছেন।

চেয়ারম্যান-মেম্বারদের লুটপাট নিয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, সরকারি ভিজিডি কার্ড তাঁর ইউনিয়নে ২৫৫টি রয়েছে। এর মধ্যে ৭৯টি তিনি নিজে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে খুঁজে খুঁজে যোগ্যদের দিয়েছেন। চালও নিজেই বিতরণ করেন। যাদের কার্ড দিয়েছেন তারা বিনা খরচেই ৩০ কেজি করে চাল পাচ্ছে দুই বছর ধরে। মেম্বাররা কী করেছেন সে বিষয়ে তিনি জানেন না। কেউ কোনো অভিযোগও করেননি। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও গন্যমান্যদের নিয়েই তিনি সব ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ তদারকি করেন।তার সার্বিক কর্মকাণ্ডে এলাকাবাসী ও জেলা-উপজেলা প্রশাসন খুবই খুশি।

নির্বাচনের ব্যয় সম্পর্কে প্রবীণ এই জনপ্রতিনিধি বলেন,আমার নির্বাচনে ব্যয় হয়েছে দুই লাখ ৫৫ হাজার টাকা। নির্বাচনের সময় বিভিন্ন জনের কাছ থেকে পাওয়া সহযোগীতা তার চেয়েও ২৫ হাজার টাকা বেশি পেয়েছি। তবে এক টাকাও কাউকে দিতে বলিনি। সবাই নিজের ইচ্ছাতেই দিয়েছেন। আর অনেকেই নিজ উদ্যোগেই ব্যক্তিগতভাবে আমার নির্বাচনের সময় খরচ করেছেন। আমার মেম্বাররা মাঝে মাঝে বলেন, হুজুর, আপনি তো বিনা পয়সায় চেয়ারম্যান হয়েছেন। আর অন্য ইউপি চেয়ারম্যানরা কোটি টাকা খরচ করেছেন।

২০১৬ সালের ৪ জুন নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হন। একই বছর নভেম্বরে তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। একই সাথে তিনি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, সাদামাটা পোশাক ও স্যান্ডেল পরে তিনি ঘুরে বেড়াচ্ছেন এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে। ঘরে ঘরে অসহায়দের খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়াকে তিনি এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব মনে করছেন।

তাঁর পুরো মনোযোগ ছিল করোনায় ঘরে আটকে পড়া গরিব অসহায় মানুষের ওপর। প্রবীণ এ আলেম চেয়ারম্যান বর্তমান সমাজব্যবস্থায় অন্যান্য চেয়ারম্যানসহ সমাজের বিত্তবানদের জন্য হতে পারেন সুযোগ্য আইডল। সমাজসেবায় তিনি সমাজের সম্মানিত ব্যক্তি, আলেম-উলামা ও জনসাধারণের জন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি পুরো সমাজে এ বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে চেয়ারম্যান হলেই আমল-ইবাদত ও সত্যবাদিতা থেকে দূরে সরে যেতে হয় না।যার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সাদামাটা আলেম মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ। সুদ ঘুষ দুর্নীতি আর দুঃশাসনের বিরুদ্ধে এই আলেম চেয়ারম্যান কঠোর।

একজন চেয়ারম্যানের ক্ষমতা কি, তা তিনি জনগনকে বুঝতে দেয়নি।এলাকার মানুষ অত্যান্ত শান্তিতে বসবাস করছেন।কোন প্রকার মামলা-হামলা ও হয়রানি ছাড়াই নিরিবিলি পরিবেশে চরকাদিরা ইউনিয়নের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ বসবাস করছেন।তার শাসনামলে মানুষের উপকার করতে না পারলেও এক পয়সার ক্ষতি এই আলেম চেয়ারম্যানের দারা হয়নি।

জানতে চাইলে চরকাদিরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম সাগর বলেন, খালেদ সাইফুল্লাহ হুজুর খুব ভালো মানুষ। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে তিনি জনগণের জন্য কাজ করছেন। এলাকায় কেউ বিপদে পড়লে সবার আগে তিনি ছুটে যান। সব কাজে আমাদেরকে সঙ্গে রাখেন। ইউনিয়নের সবাই তাঁকে ভালো জানেন।তার মত চেয়ারম্যান আমরা অতিতে কখনো পায়নি, ভবিষ্যতে আর হয়তো নাও পেতে পারি।

নিউজটি শেয়ার করুন :