শিরোনাম

কমলনগরের চরকাদিরায় ঘরবাড়ি হারিয়েও বাঁচার স্বপ্ন আবুল খায়েরের

আমানত উল্যাহ,কমলনগর (লক্ষ্মীপুর)

চারপাশে পানি, মাঝখানে ঝুঁপড়ি ঘর। স্ত্রী ও এক মেয়ে নিয়ে শেষ আশ্রয়টুকুতেই বাঁচার স্বপ্ন আবুল খায়েরের (৩৫)। চার বছর আগে রাক্ষুসি মেঘনা গিলে খেয়েছে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার বালুরচর এলাকার বাপ-দাদার বসতভিটা। উপায়ন্ত না পেয়ে পার্শ্ববর্তী কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের ভূলুয়া নদীর পাশে ঠাঁই হয়েছে দখল হওয়া সরকারের খাস জায়গাতে।

ঝুঁপড়ি ঘর তুলে স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে কোনো মতে দিনাতিপাত করছেন তিনি। বর্ষা মৌসুমে ওই ঝুঁপড়ি ঘরে বসবাস করার কোনো উপায় থাকে না। তারপরও নতুনভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন তিনি।
রামগতি-কমলনগরে মেঘনার ভাঙনে বিলীন হওয়া এ রকম হাজারো আবুল খায়ের রয়েছে।

যাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে বেড়িবাঁধ কিংবা রামগতি-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক সড়কের পাশে অথবা অন্যের জায়গায়। প্রতিবছর মেঘনার ভাঙনে রামগতি- কমলনগরের কয়েক হাজার ঘরবাড়ি ও হাজার হাজার একর ফসলি জমি বিলীন হচ্ছে। ভাঙনে উল্লেখযোগ্য কোনো বরাদ্দ না হওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন ভাঙনকবলিত এলাকার ওইসব মানুষ।

তাছাড়া গত কয়েক বছর থেকে সরকারের উদ্যোগে গৃহহীনদের জন্য ঘর করে দেয়ার বরাদ্দ হলেও ওই ঘরগুলো আবুল খায়েরদের ভাগ্যে জোটেনা। ওইসব ঘর জোটে জনপ্রতিনিধি ও তাদের আত্মীয়-স্বজন এবং সরকার দলীয় লোকজনের ভাগ্যে। অথবা যারা মোটা অঙ্কের টাকা দিতে পারেন তারাই হয় সরকারের দেয়া বিনামূল্যের ওইসব ঘরের মালিক। সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, ভূলুয়া নদীর কমলনগর অংশের হাজার হাজার একর জায়গা প্রভাবশালীরা দখল করে রেখেছেন।

ওই দখলীয় জায়গাতে কেউ মাছ চাষ করছেন। আবার কেউ দখল করে গড়েছেন বিভিন্ন প্রজাতির গাছের বাগান। তাদের মধ্যে একজন মিলন মিয়া। আবুল খায়ের এক সময় মিলন মিয়ার বাগান ও মাছের ঘের পাহারার দায়িত্বে থাকার কারণে কিছু জায়গার ব্যবস্হা করে দিয়েছেন তিনি।পরিবার নিয়ে কোনো মতে বেঁচে থাকার জন্য সামান্য জায়গার ব্যবস্হা করে দেওয়ায় মিলন মিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন আবুল খায়ের।

আবুল খায়ের জানান, শ্বশুরবাড়ি এ এলাকায় হওয়ায় চার বছর আগে তিনি উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নে এসেছেন। বর্তমানে ওই ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ভূলুয়া নদীর পাশে দিনমজুরের কাজ করে কোনো মতে স্ত্রী সন্তান নিয়ে বেঁচে আছেন। কাজ না থাকলে স্ত্রী সন্তান নিয়ে অর্ধাহরে অনাহারে দিন কাটছে তার।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাও. খালেদ সাইফুল্লাহ জানান, চলতি বছরে তার ইউনিয়নে ৬টি ঘর বরাদ্দ হয়। তিনি চারটি ঘরের সুপারিশ করলে তাকে ৩টি ঘর বরাদ্দ দেয় উপজেলা প্রশাসন। ওই ঘরগুলো প্রকৃতপক্ষে যারা পাওয়ার যোগ্য তাদের দেয়া হয়েছে। বাকি ৩টি ঘর উপজেলা প্রশাসন কিভাবে দিয়েছে তিনি জানেন না। এ ছাড়াও ওই ঘরগুলো কারা পেয়েছে সাংবাদিকদের খতিয়ে দেখার অনুরোধ করেন তিনি।

ভূলুয়া নদীর দখল হওয়া হাজার হাজার একর জমি উদ্ধার করে মেঘনার ভাঙনে ঘরবাড়ি বিলীন হওয়া মানুষগুলোর শেষ আশ্রয়স্থল করে দিতে স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান এলাকাবাসী।

নিউজটি শেয়ার করুন :